আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ত্রুটি নির্ণয় ও মেরামত পদ্ধতি। যা জেনারেল ইলেকট্রনিক্স ১ এর ইলেকট্রনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অংশের অন্তর্গত।
Table of Contents
ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ত্রুটি নির্ণয় ও মেরামত পদ্ধতি
এ অনুচ্ছেদে কফি মেকার, রাইস কুকার, টোস্টার এর বিভিন্ন সম্ভাব্য ত্রুটি, জুটির সম্ভাব্য কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
কফি মেকার (Coffee Maker):
ক্রমিক নং | সম্ভাব্য ত্রুটি | সম্ভাব্য কারণ | প্রতিকার |
১ | কফি মেকার খুব গরম হয়ে যাচ্ছে। | থার্মিস্টর নষ্ট হয়ে গেছে। | থার্মিস্টর বিচ্ছিন্ন করে একই মানের থার্মিস্টর সংযোগ করতে হবে । |
২ | কফি মেকার থেকে ঠিক মত কফি পড়ছে না। | পাইপ জ্যাম হয়ে গেছে। | কফি মেকারের ব্যাক কভার খুলে ভিতরের মল পরিষ্কার করতে হবে। |
৩ | পাওয়ার দেওয়ার পরও কফি মেকার কাজ করছে না। | ১। পাওয়ার সুইচ নষ্ট হতে পারে; ২। পাওয়ার কর্ড নষ্ট হতে পারে | ১। পাওয়ার সুইচ খুলে মাল্টিমিটার দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে, যদি নষ্ট | হয় পরিবর্তন করতে হবে। ২। পাওয়ার কর্ড মাল্টিমিটার দিয়ে কন্টিনিউটি পরীক্ষা করতে হবে, যদি নষ্ট হয় পরিবর্তন করতে হবে। |
রাইস কুকার (Rice Cooker):
ক্রমিক নং | সম্ভাব্য ত্রুটি | সম্ভাব্য কারণ | প্রতিকার |
১ | ভাত রান্না হওয়ার আগেই সুইচ অফ হয়ে যাচ্ছে। | টেম্পারেচার লিমিটার সুইচ নষ্ট। | ১। রাইস কুকারের ব্যাক পার্ট খুলতে হবে ২। টেম্পারেচার লিমিটার সুইচ খুলে একই মানের লাগাতে হবে । |
২ | রাইস কুকারের ভাত পুড়ে যাচ্ছে। | ১। টেম্পারেচার লিমিট সুইচ নষ্ট হতে পারে। ২। থার্মোস্টেট নষ্ট হতে পারে। | ১। রাইস কুকারের ব্যাক পার্ট খুলতে হবে ২। টেম্পারেচার লিমিটার সুইচ খুলে স্প্রিংটি পরীক্ষা করতে হবে। ৩। থার্মোস্টেট পরীক্ষা করে দেখতে হবে। |
৩ | রাইস কুকারে পাওয়ার সুইচ অন করার পরও পাওয়ার পাচ্ছে না। | ১। পাওয়ার সুইচ নষ্ট হয়ে গেছে। ২। পাওয়ার কর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। | ১। পাওয়ার সুইচ খুলে মাল্টিমিটার দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। যদি নষ্ট হয় পরিবর্তন করতে হবে। ২। পাওয়ার কর্ড মাল্টিমিটার দিয়ে কন্টিনিউটি পরীক্ষা করতে হবে। যদি নষ্ট হয় পরিবর্তন করতে হবে। |
৪ | কিছুদিন পর পর রাইস কুকার এর সুইচ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। | ভোল্টেজ প্রোটেক্টর শর্ট বা নষ্ট হয়ে গেছে। | ভোল্টেজ প্রোটেক্টর পরিবর্তন করে নতুন লাগাতে হবে। |
টোস্টার (Toster):
ক্রমিক নং | সম্ভাব্য ত্রুটি | সম্ভাব্য কারণ | প্রতিকার |
১ | টোস্টার পাওয়ার দেওয়ার পরও পাওয়ার পাচ্ছে না। | ১। পাওয়ার সুইচ নষ্ট হয়ে গেছে। ২। পাওয়ার কর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। | ১। পাওয়ার সুইচ খুলে মাল্টিমিটার দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। যদি নষ্ট হয় পরিবর্তন করতে হবে। ২। পাওয়ার কর্ড মাল্টিমিটার দিয়ে কন্টিনিউটি পরীক্ষা করতে হবে। যদি নষ্ট হয় পরিবর্তন করতে হবে। |
২ | টোস্টারে ব্রেড দেওয়ার পর ডাউন সুইচ নিচে নামানোর পরও টোস্টার ব্রেড উপরের দিকে ছেড়ে দিচ্ছে। | ১। ব্ৰেড হোল্ড কেসিং এ সমস্যা হতে পারে। ২। ইলেকট্রোম্যাগনেটিং কয়েল নষ্ট হতে পারে। | ১। বডি ও সার্কিট বোর্ড খুলে হোল্ড কেসিং সম্পূর্ণ নিচে নামছে কিনা দেখতে হবে। ২। যদি কোথাও বাধা পায় তাহলে কেসিংটি লং নোজ প্লায়ার্স দিয়ে ঠিক করতে হবে। ৩। যদি কেসিং এ সমস্যা না হয় তাহলে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক কয়েল পরীক্ষা করতে হবে। |
৩ | ব্রেড সম্পূর্ণ টোস্ট অটোমেটিক উপরে চলে আসছে। | ১। ইলেকট্রোম্যাগনেটিং হওয়ার আগেই কয়েল নষ্ট হতে পারে। ২। ক্যাপাসিটর নষ্ট হতে পারে। ৩। রেজিস্টর নষ্ট হতে পারে। | ১। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক কয়েল পরীক্ষা করতে হবে। যদি সমস্যা হয় পরিবর্তন করতে হবে। ২। যদি ইলেকট্রোম্যাগনেট কয়েল ঠিক ভেরিয়েবল থাকে তাহলে ক্যাপাসিটর পরীক্ষা করতে হবে। যদি সমস্যা হয় পরিবর্তন করতে হবে । ৩। ক্যাপাসিটরে চার্জিং টাইম যেহেতু ভেরিয়েবল রেজিস্টর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাই ভেরিয়েবল রেজিস্টরটি পরীক্ষা করতে হবে। |
দৃশমান ত্রুটি সনাক্ত (Visible Error Detection)
যে কোন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের দৃশ্যমান ত্রুটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হোম অ্যাপ্লায়েন্স এর সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হয়।
হোম অ্যাপ্লায়েন্স এ পাওয়ার সরবরাহ দিয়ে দেখতে হবে হোম অ্যাপ্লায়েন্স ঠিকমত কাজ করছে কিনা। যদি কাজ না করে তবে হোম অ্যাপ্লায়েন্স এর কভার খুলে সার্কিট বোডটি বা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভালোভাবে দেখতে হবে যদি কোন সংযোগ বা কম্পোনেন্ট খোলা বা পোড়া অবস্থায় থাকে তবে তা চোখের দেখাতেই শনাক্ত করতে হবে।
কনটিনিউটি পরীক্ষা (Continuity Test)
সার্কিটের পাওয়ার বন্ধ রেখে মাল্টিমিটারের সাহায্যে সার্কিটের এক কম্পেনেন্টে সাথে আর এক কম্পোনেন্টের যে পথ পিসিবিতে সংযুক্ত থাকে তার কনটিনিউটি পরীক্ষা করতে হয়।
মাল্টিমিটারকে কনটিনিউটি অপশন বা ওহম রেজে রেখে কনটিনিউটি পরীক্ষা করতে হয় এবং ওপেন ও শর্টসার্কিট টেস্ট করতে হয়।
পাওয়ার টেস্ট (Power Test)
পাওয়ার টেস্টের ক্ষেত্রে ইনপুটে এসি সাপ্লাই দিয়ে মাল্টিমিটারের সাহায্যে অ্যাপ্লায়েন্সে পাওয়ার সাপ্লাই পাওয়া যাচ্ছে কিনা তা পরিমাপ করতে হয় এবং বিভিন্ন অংশে যে পরিমাণ ডোস্টেজ থাকার কথা তা আছে কিনা পরিমাপ করে দেখতে হবে। যদি কোথাও কাঙ্খিত ডোস্টেজ পাওয়া না যায় তাহলে ঐ লাইনের সাথে সম্পর্কিত কম্পোনেন্ট পরীক্ষা করে দেখতে হয়।

ত্রুটি যুক্ত কম্পোনেন্ট পরিবর্তন (Change the Faulty Components)
১। প্রথমে মিটারের সাহায্যে সার্কিটের চিহ্নিত ফন্ট কম্পোনেন্ট গুলো খুলতে হবে।
২। ফন্ট কম্পোনেন্টের মান অনুযায়ী কম্পোনেন্টগুলো বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
৩। সংগৃহিত নতুন কম্পোনেন্টগুলো মিটারের সাহায্যে ভালো মন্দ পরীক্ষা করতে হবে,
৪। পোলারিটিযুক্ত কম্পোনেন্টের পোলারিটি টার্মিনাল নির্ণয় করতে হবে:
৫। নতুন কম্পোনেন্টগুলো সোল্ডারিং আয়রনের সাহায্যে সার্কিটে সোল্ডারিং করতে হবে
৬। সোল্ডারিং এর পর পিসিবির সোল্ডারিংগুলো একটু পরীক্ষা করে যেখানে সরকার পুনরায় সোল্ডারিং করতে হবে।
৭। সবকিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করে সার্কিটে পাওয়ার দিতে হবে।
৮। এবার দেখতে হবে অ্যাপ্লায়েন্সটি সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা ।
ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ত্রুটি নির্ণয় ও মেরামত কাজের সতর্কতা
যে কোন মেরামত এর কাজ শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিশ্চিত হয়ে নিতে হয়। তাহলে নিরাপদে ও দক্ষতার সাথে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো ব্যবহার করতে পারা যায়। কেবলমাত্র একই সাইজ, একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং একই মানের আসল কম্পোনেন্ট ব্যবহার করতে হয়।
জরুরী পরিস্থিতির জন্য সর্বদা একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কিট এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কর্মস্থলের রাখতে হবে। কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা কিট এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় তা জানতে হবে।
১. নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি বড় যন্ত্রপাতির নিজস্ব গ্রাউন্ড বৈদ্যুতিক সার্কিট রয়েছে কিনা।
২. অ্যাপ্লায়েন্সটি প্লাগ করতে কোনও এক্সটেনশন কর্ড ব্যবহার করা যাবে না ।
৩. নিশ্চিত করতে হবে যেকোন অ্যাপ্লায়েন্স বা গ্রাহক ইলেকট্রনিকের সেবা দেওয়ার আগে বিদ্যুৎ বন্ধ করা হয়েছে কি না।
৪. কোনো তিন-পিন পাওয়ার কর্ড বা অ্যাপ্লায়েন্স থেকে বা অন্য কোন গ্রাউন্ড ওয়্যার থেকে গ্রাউন্ড ওয়্যার সরিয়ে ফেলা যাবে না
৫. কোনো অ্যাপ্লায়েন্সের সুইচ, উপাদান বা বৈশিষ্ট্যগুলোতে কোনও পরিবর্তন সম্পাদন করা যাবে না ।
৬. যে কোনো সরঞ্জাম মেরামত করার আগে কোনো ক্ষতিগ্রস্থ, মোচড়ানো বা ছেঁড়া তারগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে।
৭. ইউনিটের মধ্যে থাকা সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো সঠিকভাবে এবং সুরক্ষিতভাবে সংযুক্ত রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. গরম অংশগুলো পরিচালনা করতে তাপ নিরোধক গ্লোভস ব্যবহার করতে হবে।
৯. জ্বলনযোগ্য দ্রাবক, আঠালো পদার্থ, পরিষ্কারক নয় ইত্যাদি বস্তুর পরিবর্তে জ্বলনযোগ্য নয় এমন বস্তুগুলো ব্যবহার করতে হবে ।
১০. ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থেকে ধুলো ফাঁকা করার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
১১. ধারালো ছুরি বা অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম দিয়ে কাজ করার সময় মোটা হ্যান্ড গ্লোভস ব্যবহার করতে হবে।
১২. সঠিক কাজের নিশ্চয়তার জন্য অবশ্যই অ্যাপ্লায়েন্স নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের রিপিয়ারিং ম্যানুয়ালের নির্দেশনা মানতে হবে।
১৩. সার্ভিস ম্যানুয়াল ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ সেটিং ও অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে;
আরও দেখুনঃ