আজকে আমরা আলোচনা করব ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্রের কার্যক্রম (ফাংশন), কাঠামো এবং সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে। পরিমাপক যন্ত্রগুলো ইলেকট্রনিক্স কাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এগুলোর মাধ্যমে সার্কিটে ভোল্টেজ, কারেন্ট, রেজিস্ট্যান্স, ধারকতা, ফ্রিকোয়েন্সি, তরঙ্গরূপ ইত্যাদি পরিমাপ করা যায় এবং সার্কিটের বিভিন্ন ত্রুটি সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
এই পাঠটি জেনারেল ইলেকট্রনিক্স ১ বিষয়ের অধীনে, “ইলেকট্রনিক কাজে ব্যবহৃত হ্যান্ড টুলস, পরিমাপক যন্ত্র এবং কম্পোনেন্টসমূহের ব্যবহার ও টেস্টিং” অংশের অন্তর্গত। পাঠের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা এবং তাদের বাস্তবিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করা।
আমরা আজকের আলোচনায় মাল্টিমিটার, ওসিলোস্কোপ, সিগন্যাল জেনারেটর, এলসিআর মিটার, ক্ল্যাম্প মিটার, লজিক টেস্টারসহ বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্রের ব্যবহারিক দিকগুলো আলোচনা করবো, যাতে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও দক্ষভাবে এগুলো পরিচালনা করতে পারে।
Table of Contents
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্সের কাজে ব্যবহৃত পরিমাপক যন্ত্র সমূহের ফাংশন এবং ব্যবহার পদ্ধতি
নিম্নে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্সের কাজে ব্যবহৃত পরিমাপক যন্ত্র সমূহের ফাংশন এবং ব্যবহার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
এভো (AVO) মিটার বা মাল্টিমিটার:
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্সের কাজে জুটি নির্ণয়ের জন্য কম্পোনেন্ট পরীক্ষা করতে এতো (AVO – Ammeter Voltmeter Ohmmeter) মিটার বা মাল্টিমিটার প্রয়োজন হয়। এটি কম্পোনেন্ট টেস্ট করার জন্য ব্যবহার করা হয়। দুই ধরণের মাল্টিমিটার ব্যবহার হয়। যথা: ১। অ্যানালগ মাল্টিমিটার এবং ২। ডিজিটাল মাল্টিমিটার
অ্যামমিটার (Ammeter):
ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কাজে কারেন্ট পরিমাপ করার জন্য অ্যামমিটার ব্যবহার করা হয়। কারেন্ট পরিমাণ করার জন্য অ্যামমিটারকে সার্কিটে সবসময় সিরিজে সংযোগ করতে হয়।
ভোল্টমিটার (Voltmeter):
ইলেকট্যিাক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কাজে ভোল্টেজ পরিমাপ করার জন্য ভোল্টমিটার ব্যবহার করা হয়। ডোস্টেজ পরিমাপ করার জন্য ভোল্টমিটারকে সার্কিটে প্যারালালে সংযোগ করতে হয়।
অডিও ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যাল জেনারেটর ( Audio Frequency Signal Generator) :
অডিও ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যাল জেনারেটরগুলো অডিও ফ্রিকোয়েন্সি সীমার মধ্যে সিগন্যাল উৎপন্ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অডিও সরঞ্জামগুলোর অডিও ফ্রিকোয়েন্সি পরীক্ষা করার জন্য ইলেকট্রনিক্স পরীক্ষাগারে/ল্যাবে ব্যবহার করা হয়।
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF-Radio Frequency) সিগন্যাল জেনারেটর (Signal Generator):
একটি আরাফ সিগন্যাল জেনারেটর সাধারণত একটি সিগন্যাল উৎস। যা আরএফ যোগাযোগের জন্য যেমন ওয়্যারলেস এবং সেলুলার যোগাযোগ, রাডার ইত্যাদির জন্য তৈরি করা সার্কিটগুলো পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইঞ্জিনিয়ারগণ অ্যামপ্লিচ্যুত, ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণ করতে এবং মড্যুলেশন সিগন্যাল প্রয়োগ করে সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করতে পারে।
ফাংশন জেনারেটর (Function Generator):
ফাংশন জেনারেটর এমন একটি ইন্সট্রুমেন্ট ন্যা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির, আকৃতির এবং জ্যামপ্লিচ্যুডের একটি সিগন্যাল তৈরি করে। ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাডজাস্ট করতে, আকার বা ফাংশন (সাইনোসরডাল, ট্রায়াঙ্গুলার, ক্ষমার বা রেকট্যাঙ্কুলার ) সেট করতে এবং অ্যামপ্লিচ্যুত লেভেল পরিবর্তন করতে সক্ষম। ফাংশন জেনারেটর ইলেকট্রনিক সরঞ্জামগুলোর বিকাশ, পরীক্ষা এবং মেরামতের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ডিজিটাল স্টোরেজ অসিলোস্কোপ (Digital Storage Oscilloscope):
সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল বৈদ্যুতিক রাশিকে পরিমাপ, দেখা ও চিহ্নিত করার জন্য যে ডিজিটাল মেজারিং ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা হয় তাকে ডিজিটাল স্টোরের অসিলোস্কোপ বলে।
- একটি সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি এবং অ্যামপ্লিচ্যুত পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়;
- সার্কিটের সরেজ (Noise) এর পরিমাণ সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়;
- একটি সিগন্যালের আাকার চিহ্নিত করার (সাইন, করার, ট্রাভেলার, ল-টুথ ইতালি) ব্যবহৃত হয়;
- দুটি লিপম্যানের ফেজ (Phase) পার্থক্যের পরিমাপ নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়;
- ডিজিটাল স্টোরেজ অলিপ পরিমাপকৃষ্ণ সিগনালকে সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
এলসিআর মিটার (LCR Meter):
একটি এনসিআর মিটার একটি বৈদ্যুতিক পরীক্ষার যা । যা বিভিন্ন ক্রিকোয়েন্সির সার্কিটের উপাদান ইন্ডাকট্যাল (L), ক্যাপাসিট্যাল (C) এবং রেজিস্ট্যান্স (R) পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
ট্যাকোমিটার (Tachometer):
ট্যাকোমিটার একটি যন্ত্র যা একটি মটর বা অন্যান্য মেশিনের শ্যাফট বা ডিস্কের ঘূর্ণন গতি পরিমাপ করে। ডিভাইসটি সাধারণত প্রতি মিনিটে আরপিএম (RPM- Revolution Per Minute) মিটারের ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করে।

ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স কাজে ব্যবহৃত পরিমাপক যন্ত্রসমূহ আধুনিক প্রযুক্তি জগতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিমাপ, ত্রুটি নির্ণয় ও কার্যক্ষমতা যাচাই করার জন্য এসব যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার জানা অত্যন্ত জরুরি। মাল্টিমিটার, ওসিলোস্কোপ, এলসিআর মিটার, সিগন্যাল জেনারেটরসহ অন্যান্য পরিমাপক যন্ত্রসমূহ ব্যবহার করে আমরা সহজেই সার্কিটের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও অবস্থার বিশ্লেষণ করতে পারি।
এই পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল তত্ত্বগত জ্ঞান অর্জনই করবে না, বরং বাস্তব কাজের মাধ্যমে হাতে-কলমে দক্ষতা লাভ করবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সহায়ক হবে। সঠিকভাবে পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহারের জ্ঞান একজন দক্ষ ইলেকট্রনিক্স টেকনিশিয়ান হয়ে ওঠার পথকে আরও সুগম করে তোলে।