আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-মোবাইল ফোনের প্রতিটি ব্লকের বর্ণনা
মোবাইল ফোনের প্রতিটি ব্লকের বর্ণনা (Description of Each Block inMobile Phone System)
১. সিপিইউ (CPU): সিপিইউ এর পূর্ণরূপ হলো সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit)। এটি কম্পিটারের সিপিইউ এর মতো মোবাইল ফোনের যাবতীয় কাজ প্রসেসিং করে থাকে।
প্রোগ্রামের নির্দেশনা আনুযায়ী সিপিইউতে সকল প্রকার গাণিতিক, যৌক্তিক, নিয়ন্ত্রণ ও ইনপুট/আউপুট আপারেশনসমূহ সংঘটিত হয়ে থাকে। সিপিইউকে মূলত মোবাইল ফোনের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।
২. রম (ROM): রম হলো রিড অনলি মেমোরি (Read Only Memory)। যে স্মৃতিতে (Memory) তথ্য শুধু পড়া (Read) যায় কিন্তু নতুন কোনো তথ্য লেখা (Write) যায় না তাকে রম (ROM) বলে।
রমে তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও রমে স্থায়ীভাবে তথ্য সংরক্ষিত থাকে বলে একে অনুযা (Non-Volatile) স্মৃতি বলা হয়। যা এক প্রকার প্রধান স্মৃতি (Primary Memory) হিসেবে মোবাইল সিস্টেমে কাজ করে।
৩. র্যাম (RAM): র্যাম হলো র্যানডম অ্যাকসেস মেমোরি (Random Access Memory)। র্যাম এ নতুন কোনো তথ্য লেখা (Write) যায় এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করা যায়। র্যামে তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ থাকে না।
বিদ্যুৎ চলে গেলে র্যামের ভিতরে সকল তথ্য মুছে যায় বলে ইহাকে উদ্বায়ী (Volatile) স্মৃতি বলা হয়। র্যাম মোবাইল ফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। মোবাইল ফোনের র্যাম যত বেশি হবে কার্যক্ষমতা তত বেশি হবে।
৪. পাওয়ার ইউনিট (Power Unit): মোবাইল ফোনের সকল ইউনিটে পাওয়ার সরবরাহ করা এবং চার্জিং নিয়ন্ত্রণ করা পাওয়ার ইউনিটের কাজ। পাওয়ার ইউনিটে মূলত একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC-Integrated Circuit) ব্যবহার করা হয়, যাকে পাওয়ার আইসি বলা হয়।
৫। চার্জিং ইউনিট (Charging Unit): চার্জিং ইউনিটে চার্জিং কানেক্টর হিসাবে ইউএসবি টাইপ এ (মাইক্রো ইউএসবি) বা ইউএসবি টাইপ সি ব্যবহার করা হয় এবং চার্জিং নিয়ন্ত্রণের জন্য ফিউজ ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করা হয়। চার্জিং কানেক্টরে চার্জার সংযোগ করে মোবাইল ফোন চার্জ করা হয়।
৬। পাওয়ার অ্যাম্প্লিফায়ার (Power Amplifier): পাওয়ার অ্যাম্প্লিফায়ারকে সংক্ষিপ্তভাবে পিএ (PA) বলা হয়। পাওয়ার অ্যাম্পিফায়ার মূলত আর অ্যাম্প্লিফায়ার, যা এক মোবাইল ফোন হতে অন্য মোবাইল ফোনে সিগন্যাল (অডিও, ভিডিও বা ডাটা) প্রেরণ বা গ্রহণ করার সময় অ্যাম্প্লিফায়ার হিসেবে কাজ করে এবং রিসিভার (Rx) ও ট্রান্সমিটার (Tx) সুইচ হিসেবেও কাজ করে।

৭। ব্যাটারি (Battery): ব্যাটারি মোবাইল ফোনের সকল ইউনিটকে কার্যকরী করার জন্য ডিসি (DC-Direct Current) পাওয়ার সরবরাহ করে থাকে। মোবাইল ফোনে সাধারণত ৩.৭ ভোল্টের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি (Lithium lon Battery) ব্যবহার করা হয়।
৮। ডিসপ্লে (Display): মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট বা কম্পোনেন্ট। যার সাহায্যে ডাটা, ছবি বা ভিডিও আমাদের দর্শনযোগ্য করে প্রদর্শন করা হয়।
ফিচার ফোনে (Feature Phone) টিএফটি এলসিডি ডিসপ্লে (TFT LCD-Thin Film Transistor Liquid Crystal Display) ব্যবহার করা হয় এবং স্মার্ট ফোনে (Smart Phone) সাধারণত আইপিএস (IPS-In-Plane Switching), এইচডি (HD High Definition), ফুল এইচডি, ফুল এইচডি প্লাস, রেটিনা (Retina) ইত্যাদি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়।
৯। ক্যামেরা (Camera ): মোবাইল ফোনে ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণের জন্য ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ফিচার ফোনে ভিজিএ ক্যামেরা (VGA Camera) এবং স্মার্ট ফোনে বিভিন্ন মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা (Mega Pixel Camera) ব্যবহার করা হয়।
১০। কিপ্যাড (Keypad): কিপ্যাডকে লজিক বোর্ডও বলা হয়। মোবাইল ফোনে নাম্বার বা টেক্সট টাইপ করার জন্য কিপ্যাড ব্যবহার করা হয়।
১১। মেমোরি ইউনিট (Memory Unit) মোবাইল ফোনে অডিও বা ভিডিও পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত এসডি কার্ড বা মেমোরি কার্ড সংযুক্ত করার জন্য মেমোরি কার্ড প্লট বা মেমোরি ইউনিট ব্যবহার করা হয়।
১২। স্পিকার (Speaker): স্পিকার ইলেকট্রিক্যাল (অডিও) সিগন্যালকে শ্রোতার শ্রবণযোগ্য শব্দ শক্তিতে রুপান্তর করে।
১৩। মাইক্রোফোন (Microphone ): মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মাইক্রোফোন শব্দ শক্তির সমতুল্য ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালে রুপান্তর করে।
১৪। ব্লুটুথ (Bluetooth ): ব্লুটুথ হচ্ছে তারবিহীন পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক প্রটোকল (Network Protocal) যা স্বল্প দূরত্বে ডাটা আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। মোবাইল ফোনে ব্লুটুথ বিল্ট ইন আকারে থাকে। ব্লুটুথের সাহায্যে এক ফোন হতে অন্য ফোনে ডাটা ট্রান্সফার করা যায়।
১৫। সিম কার্ড ইউনিট বা সিম কার্ড স্লট (SIM Card Unit or SIM Card Slot): সিম (SIM) এর পূর্ণরূপ “সাবসক্রাইবার আইডেনটিফিকেশন মডিউল’ (Subscriber Identification Module) যার বাংলা অর্থ “গ্রাহক পরিচিতি মডিউল’। সিমকার্ডকে সিম স্লটের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
১৬। ডিএসি (DAC) এবং এডিসি (ADC): ডিএসি এর পূর্ণরূপ ডিজিটাল টু অ্যানালগ কনভার্টার (Digital to Analog Converter) এবং এডিসি এর পূর্ণরূপ অ্যানালগ টু ডিজিটাল কনভার্টার (Analog to Digital Converter)।
গ্রাহকের মোবাইল ফোন হতে ভয়েস বা ডাটা প্রেরণ করার সময় ডিএসি এর মাধ্যমে ফোনের ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগ সিগন্যালে রুপান্তর ও মডুলেশন করে বাতাসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় এবং গ্রাহকের মোবাইল ফোনে যখন কোনো ভয়েস বা ডাটা আসে তখন ডিমডুলেশন করে এডিসি এর মাধ্যমে অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিাল সিগন্যালে রুপান্তর করা হয়।
১৭। আরএক্স/টিএক্স সুইচ (Rx / Tx Switch): মোবাইল ফোন ট্রান্সমিটার (Tx Transmitter ) এবং রিসিভার ( Rx Receiveer) হিসাবে কাজ করে। যখন গ্রাহকের মোবাইল ফোন হতে ভয়েস বা ডাটা প্রেরণ করা হয় তখন মোবাইল ফোনের আরএক্স/টিএক্স সুইচ অটোমেটিক ট্রান্সমিটার মোডে অর্থাৎ টিএক্স সুইচ অন হয় এবং ভয়েস বা ডাটা প্রেরণ করা হয়। ডাটা রিসিভ করার সময় আরএক্স মোডে সুইচ অন করে ভয়েস বা ডাটা রিসিভ করা হয়।
১৮। জিপিএস (GPS): জিপিএস হলো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (Global Positioning System) এর দ্বারা স্যাটেলাইটের সাহায্যে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী নিজের বর্তমান লোকেশন জানতে পারে এবং অন্যান্য জিপিএস ব্যবহারকারীদের লোকেশন জানা যায়।
১৯। কোডেক (Codec ): কোডেক এর পূর্ণরূপ কোডার এন্ড ডিকোডার (Coder and Decoder) মাইক্রোফোনের আউটপুট সিগন্যাল অনেক বড় থাকায় কোডারের মাধ্যমে কোডিং করে সমতুল্য সিগন্যালে পরিণত করা হয় এবং রিসিভারের গ্রহণকৃত অডিও সিগন্যালকে ডিকোডের সাহায্যে ডিকোডিং করে স্পিকারের মাধ্যমে শ্রোতার শ্রবণযোগ্য শব্দে পরিণত করার জন্য সমতুল্য সিগন্যালে পরিণত করা হয়।
২০। ইউএসবি (USB): ইউএসবি এর পূর্ণরূপ ইউনিভার্সেল সিরিয়াল বাস (Universal Serial Bus)। মোবাইল ফোনে চার্জিং এবং ডাটা আদান প্রদানের জন্য মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট ব্যবহার করা হয়। তবে কোনো কোনো ফোনে টাইপ সি পোর্টও ব্যবহার করা হয়।
আরও দেখুনঃ