আজকে আমরা বিপদজনক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করব। যা জেনারেল ইলেকট্রনিক্স ১ এর জেনারেল ইলেকট্রনিক্স বিষয়ক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অংশের অন্তর্গত।
Table of Contents
বিপদজনক অবস্থা
বিপদজনক অবস্থা হলো এমন একটি পরিস্থিতি যে পরিস্থিতিতে কোনো খারাপ কিছু হওয়ার খুব সম্ভাবনা থাকে ।
বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত?
বিপজ্জনক অবস্থার উদাহরণ:
- একটি প্রাণী একটি পাইপে আটকে আছে ।
- একজন ব্যক্তির সাঁতারের সহায়তা প্রয়োজন ।
- এক লোক জলাশয়ে পড়েছেন।
আমাদের কী করা উচিত?
- প্রাণী কর্মীকে অবহিত করা।
- ব্যক্তিটিকে জীবনরক্ষক সামগ্রী নিক্ষেপ করা।
- তাকে জলাশয় হতে টেনে তুলে আনা ।
ঝুঁকির ধারণা (Concept of Hazards )
বিপদ বা ঝুঁকি হলো যেকোনো বাস্তব অবস্থা বা ঘটনা। যার কারণে কোনো ব্যক্তির বা ধনসম্পদের বা পরিবেশের ক্ষতি বা উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপত্তি বা হতাহত অথবা দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যাধি হতে পারে। কিন্তু তা এখনো ঘটেনি। বিপদের সর্বশেষ ফল হলো দুর্ঘটনা। সম্ভাব্য বিপদসমূহ পর্যবেক্ষণ, সনাক্তকরণ এবং দূরীকরণ বা কমানোর ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। দুর্ঘটনার কারণে স্বাস্থ্য, জীবন, পরিবেশ ও ধনসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ঝুঁকির ধরন এবং শ্রেণিবিন্যাস (Types of Hazard and Classification)
কর্মক্ষেত্রে বিপদ বা ঝুঁকিকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়। যথা:
- শারীরিক ঝুঁকি
- রাসায়নিক ঝুঁকি
- জৈবিক ঝুঁকি
- মনোসামাজিক ঝুঁকি
- মানসিক ঝুঁকি
শারীরিক ঝুঁকি (Physical Hazards )
কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের পদার্থের কারণে যে বিপদের বা ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাই শারীরিক বিপদ বা ঝুঁকি। ঝুঁকির বিভিন্ন ধরণের উপাদানসমূহঃ
- একটি বন্ধ স্থানান্তরের কারণে একজন কর্মীর বিপদ
- অতিরিক্ত শব্দ
- অপর্যাপ্ত আলোকসজ্জা
- চরম তাপমাত্রা
- চরম চাপ
- কম্পন
- বিকিরণ ইত্যাদি।
রাসায়নিক ঝুঁকি (Chemical Hazards )
কাঁচামালসমূহ, উৎপাদিত পণ্য বিক্রিয়কারী পদার্থ ইত্যাদি কখনো কখনো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে। যেমন- বিস্ফোরণ, বিকিরণ, বিষক্রিয়া, ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া, বিষবাষ্প, মরিচা পড়া, জ্বালাপোড়া, ক্যান্সার ইত্যাদি । রাসায়নিক বিপদের জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের পদার্থগুলো হলো: এসিড, ক্ষার, ডাইস, পেইন্ট, দ্রাবক, কটন ডাস্ট, গ্যাস বাষ্প, ওয়েল্ডিং ধোঁয়া, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, ক্রোমিয়াম, লেড বা সীসা ইত্যাদি।
জৈবিক ঝুঁকি (Biologycal Hazards )
ক্ষুদ্র-অনুজীব এবং তাদের বিপাকীয় পদার্থের কারণে জৈবিক বিপদ হয়। যেমন-
- নর্দমার পানিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অনুজীব থাকে। সালফারযুক্ত দ্রব্য (যেমন-প্রিজ, তেল ইত্যাদি) আহার করলে তাদের শরীরে বিপাকীয় উৎপাদক হিসেবে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস নিঃসরণ করে। স্বল্প মাত্রার হাইড্রোজেন সালফাইড খুবই বিষাক্ত। এসবের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবি কীট যেগুলো ধুলা বালিতে ভেসে বেড়ায়, তাদের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হয়। এটি এক ধরণের জৈবিক বিপদ ।
- প্রাণি এবং প্রাণির অঙ্গ প্রত্যঙ্গ চামড়া, পশম, চুল ইত্যাদি থেকে তৈরি পণ্য জৈবিক বিপদের অন্তর্ভূক্ত। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস বা পরজীবী কীট, আক্রান্ত পশু, কোনো ব্যক্তি বা দূষিত জৈবিক তরলের মাধ্যমে হুড়াতে পারে। যেমন- অ্যান্থ্রাক্স (ব্যাকটেরিয়া), টিউবারকিউলোসিস (মাইকোব্যাকটেরিয়াম), এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি (ভাইরাস), অ্যাসপারজিলাস (ফাংগি), বাইসিনোসিস (এনডোটক্সিন), বার্ড ফ্লু (ভাইরাস), ম্যাড কাউ, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি।
মনোসামাজিক ঝুঁকি (Psychosocial Hazards )
কর্মক্ষেত্রে কাজ সম্পর্কিত অথবা কাজের অবস্থানগত বিষয় যা কর্মীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। ফলে মনোসামাজিক বিপদ সৃষ্টি হয়। যেমন- মানসিক বিষাদ, কাজের প্রতি একঘেয়েমী ভাব, অস্বস্তি এবং জ্বালা পোড়া ইত্যাদি।
এরগনোমিক বিপত্তি (Ergonomic Hazard )
প্রতিটি পেশার কাজই এক শ্রমিকের শরীরের সাথে সম্পর্কিত। কর্মক্ষেত্রে শারীরিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে এরগনোমিক বিপত্তিগুলো দেখা দেয় যা কর্মীর শরীরে পেশীর ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। এ ধরণের বিপত্তি সহজে শনাক্ত করা যায় না, এ বিপদের উদাহরণ হল অপর্যাপ্ত আলো, পুনরাবৃত্ত পতি, অতিরিক্ত কম্পন এবং দুর্বল অঙ্গবিন্যাস ইত্যাদি।
- দীর্ঘ সময় কাজ করা, কখনও কখনও সঠিক চেয়ার-টেবিল ব্যবহার না করা বা অপর্যাপ্ত বসার সিটের কারণে পীঠের নিচে ব্যথা, পা এবং হাত/বার জয়েন্টে ব্যথা;
- ভারী বোঝা, সরঞ্জামাদি ইত্যাদি সরাতে বা পরিচালনা করার সময় অধিক শারীরিক শক্তির প্রয়োগ;
- অপর্যাপ্ত আলো এবং আইস্ট্রেইনের কারণে দৃষ্টি-সংক্রান্ত অর্থদ্ধি ও চোখের সমস্যা (উদাহরণস্বরূপ- সার্কিটবোর্ডের কাজ করার সময়);
- আরামদায়ক সিটের অভাব, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কারণে কোমরের ব্যথা
- সেলুলার ফোন বা রেডিও যোগাযোগ সরঞ্জাম দ্বারা নিয়ন্ত্রণের ফল স্বরূপ মানসিক অস্বস্থি।
আরও দেখুনঃ