সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

আজ আমরা আলোচনা করব সিআরটি (Cathode Ray Tube) পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে। এটি জেনারেল ইলেকট্রনিক্স ১ বিষয়ের “টেলিভিশন বেসিকস” অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সিআরটি প্রযুক্তি একসময় টেলিভিশন ও মনিটরের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ডিসপ্লে প্রযুক্তি ছিল। এই পিকচার টিউবের মূল কাজ হলো ইলেকট্রন বিকিরণ করে ফসফরাস প্রলেপিত পর্দায় আলো সৃষ্টি করা এবং তার মাধ্যমে চিত্র উপস্থাপন করা।

একটি সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশ যেমন ইলেকট্রন গান, ফোকাসিং সিস্টেম, ডিফ্লেকশন কয়েল, ফসফরাস লেয়ার ইত্যাদি—সবকিছু সমন্বিতভাবে কাজ করে একটি নিরবচ্ছিন্ন ও স্থির চিত্র প্রদর্শনে সাহায্য করে। আজকের পাঠে আমরা প্রতিটি অংশের নাম, অবস্থান এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানব, যা ভবিষ্যতে টেলিভিশন মেরামত বা বিশ্লেষণে শিক্ষার্থীদের সহায়ক হবে।

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা
একটি রঙিন সিআরটি পিকচার টিউব এর বিভিন্ন অংশ

 

পিকচার টিউব হচ্ছে একটা বায়ু শূন্য মোটা কাচের বাহু, যার মধ্যে একটা ইলেকট্রন গান এবং একটা ড্রিন বা ফেসপ্লেট থাকে ।
এটি প্রধানত তিনটি সেকশন নিয়ে গঠিত ।

(ক) ইলেকট্রন গান (Electron Gun ),

(খ) ডিফ্লেকটিং সিস্টেম (Deflecting System),

(গ) ফ্লোরেসেন্ট স্ক্রিন (Fluorescent Screen) |

নিচে একটি পিকচার টিউবের চিত্রসহ বিভিন্ন অংশের বর্ণনা করা হলোঃ

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

(ক) ইলেকট্রন গান সেকশন (Electron Gun Section):

ইলেকট্রন গান সেকশন নিম্নোক্ত অংশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। যথা:

১। হিটার (Heater)

২। ক্যাথোড (Cathode)

৩। কন্ট্রোল গ্রিড (Control Grid )

৪। স্ক্রিন গ্রিড এবং অ্যাক্সেলারেটিং গ্রিড (Screen Gride and Accelerating Grid )

৫। ফোকাসিং গ্রিড ও সেকেন্ড অ্যানোড (Focusing Grid and Second Anode)

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

১। হিটার (Heater):

ক্যাথোডকে গরম করার জন্য হিটার ব্যবহার করা হয়। হিটার থাকে ক্যাথোডের মাঝখানে। ইহা মনোক্রোম পিকচার টিউবের ফিলামেন্টের জন্য প্রয়োজন হয়। সাধারণত ৬.৩ ভোল্টেজের (এসি) এবং হিটার কারেন্ট হচ্ছে ৩০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার। এ ভোল্টেজটি এসি পাওয়া যায় মেইন পাওয়ার সাপ্লাই থেকে অথবা ইএইচটি (EHT) ট্রান্সফরমার থেকে।

২। ক্যাথোড (Cathode):

এটি সিলিন্ডার আকৃতির। এতে ক্যালসিয়াম, বেরিয়াম এবং স্ট্রনশিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ দেয়া থাকে। ক্যাথোড একটি ছোট মেটালিক অক্সাইড ডিস্ক, যা পিকচার টিউবের চিকন প্রান্তের দিকে বসানো থাকে এবং হিটারকে ঢেকে রাখে। হিটারের মাধ্যমে ক্যাথোডকে তাপ দিলে থার্মো আয়নিক (Thermoionic) প্রক্রিয়ার বিচ্ছুরণ ঘটে। ক্যাথোড এবং হিটার একে অপর হতে পৃথক। ক্যাথোডের প্রধান কাজ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলেকট্রন তৈরি করা। এতে কন্ট্রোল গ্রিডের সাপেক্ষে ধনাত্মক ভোল্টেজ দেয়া
হয়।

৩। কন্ট্রোল গ্রিড (Control Grid):

ইলেক্ট্রন গান সেকশন এ ক্যাথোডের পরবর্তী অংশই হলো কন্ট্রোল গ্রিড। এটি একটি গোলাকার সিলিন্ডারের মতো। এতে একটি ছোট অ্যাপারচার থাকে। এ অ্যাপারচার এর মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রন অতিক্রম করতে পারে। কন্ট্রোল গ্রিডে ক্যাথোড এর সাপেক্ষে ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়, যাতে বিচ্ছুরিত ইলেকট্রনগুলো চারদিকে বিচ্ছুরিত না হয়ে সূক্ষ্ম রে-এর আকারে টিউবের অ্যাক্সেস বরাবর চলাচল করে এবং এর কাজ হচ্ছে ক্যাথোড থেকে ফেস প্লেটের দিকে ধাবমান ইলেক্ট্রনের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করা। এর দ্বারা আলোর উজ্জ্বলতা ও তীব্রতা (Brightness and Intensity) নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।

৪। অ্যাক্সেলারেটিং গ্রিড ( Accelerating Grid):

এর আকার সিলিন্ডারের মতোই। এতে একটি অ্যাপারচার বিশিষ্ট দেয়াল থাকে। যার ফলে বিমকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে একটি সংকীর্ণ পথে চালিত করে। অ্যাক্সেলারেটিং গ্রিড অভ্যন্তরীণ ওয়াল কোটিং (Coating) এর সাথে ক্লিপ দ্বারা যুক্ত করা থাকে। অধিক ধনাত্মক পটেনশিয়াল থাকায় ইলেক্ট্রন বিম এর গতিবেগ বৃদ্ধি পায়।

৫। ফোকাসিং গ্রিড (Focusing Grid):

এটি একটি ডায়াগ্রাম বিশিষ্ট সিলিন্ডার আকৃতির গ্রিড। এতে ক্যাথোড এর সাপেক্ষে পজিটিভ (+Ve) পটেনশিয়াল দেয়া হয়। এর পটেনশিয়াল অ্যাক্সেলারেটিং অ্যানোড এর চেয়ে কম হয়।

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

(খ) ডিফ্লেকটিং সেকশন (Deflecting Section):

টেলিভিশন এর পিকচার টিউবে দু’ভাবে ডিফ্লেকশন ঘটানো হয়। যথা:

১। ইলেকট্রোস্ট্যাটিক এবং

২। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক

ম্যাগনেটিক ডিফ্লেকশনের জন্য দু’জোড়া ডিফ্লেকটিং কয়েল ব্যবহার করা হয়। বিমকে হরিজন্টাল ও ভার্টিক্যাল ডিফ্লেকশন ঘটানোর জন্য হরিজন্টাল এবং ভার্টিক্যাল স্ক্যানিং কয়েল দুটি টিউবের গলায় ইয়াকের মধ্যে জড়ানো
থাকে।

ডিফ্লেকশন সেকশন মূলত নিম্নোক্ত অংশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। যথাঃ

১। ভার্টিক্যাল ডিফ্লেকটিং কয়েল

২। হরিজন্টাল ডিফ্লেকটিং কয়েল;

৩। সেন্টারিং কয়েল ;

৪। পিনকুশন ম্যাগনেট ।

১। ভার্টিক্যাল ডিফ্লেকটিং কয়েল (Vertical Deflecting Coil):

ভার্টিক্যাল ডিফ্লেকটিং কয়েলটি ইলেক্ট্রন বিমটিকে নিচের দিকে ডিফ্লেকশন ঘটায়। প্রত্যেক জোড়া কয়েল এর জন্য একই সময়ে ডিফ্লেকটিং স-টুথ কারেন্ট প্রয়োগ করা হয়। যার ফলে বিমটি উপরে ও নিচে উঠা নামা করতে পারে।

২। হরিজন্টাল ডিফ্লেকটিং কয়েল (Horizontal Deflecting Coil):

হরিজন্টাল ডিফ্লেকটিং কয়েল বিম অ্যাক্সেস এর উপরে এবং নিচে হরিজন্টাল তলে অবস্থান করে। হরিজন্টাল ওয়াইন্ডিং এর জন্য যে ফিল্ড তৈরি হয় তার গতি নিচের দিকে।

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন
৩। সেন্টারিং ম্যাগনেট (Centering Magnet):

পিকচার টিউবের মধ্যে ইলেক্ট্রন গানের ডিজাইন এবং বসানোর জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে শিফটিং (Shifting) পদ্ধতি বলে। সাধারণত এ পদ্ধতিতে বিম শূন্য ডিফ্লেকশন এ স্থির থাকে। এ কাজ একজোড়া স্থায়ী ম্যাগনেট রিং ব্যবহার করে করা হয়।

৪। পিনকুশন ম্যাগনেট (Pincushion Magnet):

টিভি-এর তৈরিকৃত রাস্টারটি উপর এবং নিচ দিক হতে ভিতরের দিকে এবং বাম ও ডান দিক হতে ভিতরের দিকে বেঁকে আসে। এ বেঁকে আসাকেই পিনকুশন ডিস্টরশন বলে।

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

(গ)  স্ক্রিন সেকশন (Screen Section) :

এ সেকশনে মূলত নিম্নোক্ত অংশগুলো থাকে। যথা:

১। গ্লাস ফেসপ্লেট (Glass Faceplate)

২। ফসফর কোটিং (Phosphor Coating

৩। অ্যালুমিনাইজড কোটিং (Aluminized Coating)

৪। অ্যাকোয়াড্যাগ কোটিং (Aquadag Coating)

৫। অ্যানোড ভোল্টেজ (Anode Voltage)

১। গ্লাস ফেসপ্লেট (Glass Paceplate):

পিকচার টিউব একটি পুরু গ্লাস ফেলপ্লেট দ্বারা তৈরি। এটি সম্পূর্ণ সমতল। এটি প্রায় ১/২ ইঞ্চি পুরু করে তৈরি করা হয়। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সব জিন ব্রেন্টাগুগুলার (Rectangular) করে তৈরি করা হয়। ফেসপ্লেট এর ভিতরের সারফেসে ফসফরকোটিং দেয়া থাকে।

২। ফলকরকোটিং (Phosphor Coating) :

পিকচার টিউবের পর্দায় গ্লাস ফেল্স প্লেটের ভিতরের পার্শ্বে কেমিক্যাল ফসফর যারা কোটিং দেয়া হয়। এজন ৪ (চার) নাম্বারের ফলকর ব্যবহার করা হয়।

৩। অ্যালুমিনাইজড কোটিং (Aluminized Coating):

সমস্ত পিকচার টিউবের ফসফর স্ক্রিনের পিছনে একটি অ্যালুমিনিয়ামের কোটিং দেয়া থাকে। স্ট্রাইকিং পটেনশিয়ালের (Striking Potential) অসুবিধা থেকে পর্দাকে রক্ষা করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

৪। অ্যাকুরাভ্যাগ কোটিং (Aquadag Coating):

সকল পিকচার টিউবের ভিতরের দিকে কন্ডাকটিভ গ্রাফাইটের একটি প্রলেপ থাকে। এ কোটিংকে সাধারণত ইএইচটি (EHT) এর সাথে সংযুক্ত করা হয়।

৫। অ্যানোড ডোস্টেজ (Anode Voltage):

অ্যানোড ভোল্টেজ হলো একটি কন্ডাকটিভ ম্যাটেরিয়াল এর গ্রাফাইট কোটিং। সাধারণত একে অ্যাকুয়াড্যাগ বলে। এটি টিউবের ভিতরের পার্শ্বে দেয়া থাকে। এ কোটিং ফেসপ্লেট হতে টিউবের গলা পর্যন্ত বিস্তৃত।

google news
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

অনুসন্ধানমূলক কাজ

গিজারটি (CRT) পিকচার টিউব এর বিভিন্ন অংশ শনাক্তকরণ।

 

অনুসন্ধানমূলক প্রশ্ন

কিভাবে সিআরটি (CRT) পিকচার টিউব এর বিভিন্ন অংশ শনাক্ত করা হয়।

আমরা শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে সাথে নিয়ে নমুনা মোতাবেক সিআরটি (CRT) পিকচার টিউব এর বিভিন্ন অংশ শনাক্ত করে সংযুক্ত তথ্য ছকটি পূরণ করি:

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

সিআরটি পিকচার টিউবের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment